নূরুল হক (বীর উত্তম)

১৯৭১ সালের ২৮ নভেম্বর। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রাধানগরে। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর কয়েক দিন ধরে যুদ্ধ হয়। রাধানগরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল বেশ শক্তিশালী। প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ও টসি ব্যাটালিয়ন। তারা বেশ দুর্ধর্ষ প্রকৃতির ছিল। ২৭ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী এককভাবে রাধানগরে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে রাধানগরের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান দখল করে নেন। এই যুদ্ধে নূরুল হকসহ বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা অসীম সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। ২৮ নভেম্বর সকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর্টিলারি গোলাবর্ষণ করে সেখানে পাল্টা আক্রমণ চালায়। সকাল ৭টা বেজে ১০ মিনিটের মতো হবে। চারদিক দিনের আলোয় উদ্ভাসিত। এ সময় প্রতিটি প্লাটুন এবং সেকশনকে পাকিস্তানিদের যেকোনো ধরনের প্রতিহামলা প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত করে নির্বাচিত কমান্ডপোস্ট এলাকায় অবস্থান করছিল মুক্তিযোদ্ধারা। ৮টার দিকে পাকিস্তানিদের সেই প্রতীক্ষিত প্রতিহামলা শুরু হয়ে গেল। প্রথমেই প্রায় ১৫ মিনিট ধরে পাকিস্থানিরা ব্যাপক আকারে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর গোলা নিক্ষেপ করল। পাকিস্তানিরা যেন দেখে দেখে গোলা নিক্ষেপ করছিল। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের দখলীকৃত পাকিস্তানিদের বাংকারগুলো এতই মজবুত ছিল যে আর্টিলারি গোলা ক্ষতি করতে পারছিল না। হঠাৎ একটি গোলা এসে কমান্ডপোস্টের বাঁশঝাড়টির প্রায় সবগুলো বাঁশই টুকরো টুকরো করে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলল। এ সময় নূরুল হক দেহটি টুকরো টুকরো হয়ে চারদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেল। তখন নূরুল হক গোলার আঘাতে শহীদ হন। তাঁর শরীর খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়। এ সময় তিনি তাঁর অধিনায়ক এস আই এম নূরুন্নবী খান (বীর বিক্রম) কাছেই ছিলেন।