শহিদুল হক ভূঁইয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা:
১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত চন্দ্রপুর-লাতুমুড়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা। এই প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল বেশ সুবিধাজনক স্থানে। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে সেখানে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করলেন শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে। তাঁদের সঙ্গে ছিলো মিত্র বাহিনীও। তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকল। শহিদুল হক ভূঁইয়া মুক্তিবাহিনীর অবজারভার। তিনি দূরবর্তী স্থানে থাকা যৌথ বাহিনীর গোলন্দাজ (আর্টিলারি) দলকে বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে গ্রিড রেফারেন্স (শত্রুর অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য) জানাচ্ছেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোলন্দাজ দল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে গোলা ফেলছে। ভোর থেকে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলল। কিন্তু মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে সাঁড়াশি আক্রমণ করেও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তেমন ক্ষতি করতে পারল না। বরং তাদেরই ক্ষয়ক্ষতি হলো ব্যাপক। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সেনারা দিশেহারা। এমন অবস্থায় তাঁদের পশ্চাদ্পসরণের নির্দেশ দেওয়া হলো। তাঁর বেতারযন্ত্রেও এল সেই নির্দেশ। সে সময় শহিদুল হক ভূঁইয়া মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধক্ষেত্রের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট খন্দকার আজিজুল ইসলামের পাশে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙ্কার উঁচু স্থানে। সেখান থেকে বৃষ্টির মতো দূরপাল্লার গুলি ছুটে আসছে। শহিদুল হক ভূঁইয়া বেতারযন্ত্রে কথা বলছেন, এমন সময় তাঁর চোখের সামনে খন্দকার আজিজুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। সঙ্গে সঙ্গে নিভে গেল তাঁর প্রাণবায়ু। শহীদ হলেন তিনি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও মুক্তিযোদ্ধাদের সামান্য যে মনোবল ছিল, এরপর তা-ও ভেঙে পড়ল। যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ চলে গেল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়। মিত্রবাহিনীর একজন কোম্পানি কমান্ডার (শিখ মেজর), তিনজন জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারসহ ৪৫ জন এবং মুক্তিবাহিনীর লেফটেন্যান্ট খন্দকার আজিজুল ইসলামসহ ২২ জন শহীদ হন। আহত হন অসংখ্য। পরে আহত ও শহীদদের মরদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে শহীদ হন আরও কয়েকজন।
https://bn.wikipedia.org/s/2s39
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে